নিজস্ব সংবাদদাতা :
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আদিবাসি ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা
টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের নয় হাজার একর বন ভূমি রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষনার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার মধুপুর উপজেলার গায়রা মিশনারী প্রাইমারি স্কুল মাঠে এক আদিবাসী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডেনী দ্রং। প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আদিবাসি ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা, জাতীয় আদিবাসি পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র সরেণ, আদিবাসি ফোরামের সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু খৃস্টান বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সম্পাদক রানাদাশ গুপ্ত, ঐক্য ন্যাপের পঙ্কজ ভট্রাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, জয়েরশাহী আদিবাসি উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, আদিবাসি গারো নেতা অজয় এ মৃ, গারো মহিলা সংগঠন আচিকমিচিক সোসাইটির সভানেত্রী সুলেখা ¤্রং প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সন্তু লারমা বলেন,‘ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এখন আর নেই। দেশ জুড়ে এখন আদিবাসিদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আদিবাসিদের আবাদ করা জমি আজ সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা করা হচ্ছে। পাঁচচল্লিশ বছরে এদেশের কোনো সরকারই আদিবাসিদের পক্ষে কাজ করেনি। সবাই তাদের শোষণ ও নিপিড়ন করেছে। বর্তমান মহাজোট সরকারও আদিবাসি বান্ধব সরকার নয়। এরাও আদিবাসিদের দুঃখ কষ্ট নিবারনে কোনো ভূমিকা রাখেনি। মধুপুরে আদিবাসি গারোরা যুগ যুগ ধরে আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়। তাদের ভোটে নির্বাচিত সরকার আজ ক্ষমতায়। অথচ সেই সরকারের আমলে মধুপুর বনাঞ্চলের নয় হাজার একর বন ভূমি রিজার্ভ ফরেস্ট হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। রিজার্ভ ঘোষণার ফলে গারো অধ্যুষিত ১৪ গ্রামের বহু পরিবার উচ্ছেদ হবে। এলাকার নির্বাচিত সাংসদ ড. আব্দুর রাজ্জাক গারোদের পাশে দাড়াননি। তাই গারো যুবকদের আজ নতুন করে ভাবতে হবে। তারা কাদের পেছনে গিয়ে কিভাবে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছেন। গারোদের দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে লাভ হবেনা। বিপদের সময় শাসক দল আদিবাসিদের পেছনে দাড়ায় না। উল্টো তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ যেখানে বিদ্যমান সেটি টিকে রাখার জন্য আদিবাসিদের উপর চাপাচাপি করে থাকে। বাঁচার জন্য গারোদের আজ প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আদিবাসিরা বাঙ্গালী নয়। তাই এদেশে বাঙ্গালীদের যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তা থেকে গারো যুবকদের মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। একই সাথে তিনি মধুপুর বনাঞ্চলের রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা বাতিলের দাবি জানান। এ ব্যাপারে মধুপুর বন বিভাগ জানায়, মধুপুর বনাঞ্চলের ৪৫ হাজার একর বনভূমির মধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার বনভূমি জবর দখল অথবা অন্যভাবে বেহাত হয়ে গেছে। এখন মাত্র নয় হাজার একর বনভূমিতে প্রাকৃতিক বন টিকে আছে। ১৯২৭ সালের বন আইনের ২০ ধারা ক্ষমতাবলে টিকে থাকা এ নয় হাজার বনভূমিকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করে।